পাটিসাপটা পিঠা রেসিপি

patiShaptha-pitha

পাটিসাপঠা পিঠা: ঐতিহ্যবাহী বাংলা মিষ্টির রেসিপি

বাংলা মিষ্টির জগতে পিঠার বিশেষ স্থান রয়েছে। এই পিঠার মধ্যে পাটিসাপঠা পিঠা একটি ঐতিহ্যবাহী, সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় মিষ্টি। পাটিসাপঠা পিঠা সাধারণত তেলে ভেজে তৈরি করা হয় এবং এতে থাকে সুগন্ধি নারকেল, গুড় এবং ময়দা। পাটিসাপঠা পিঠার স্বাদ এবং আকার একে অন্য ধরণের পিঠার থেকে আলাদা এবং এটি মিষ্টির প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই রেসিপিটি সহজ এবং স্বাদে একদম নিখুঁত।

পাটিসাপঠা পিঠা তৈরির জন্য উপকরণ

পাটিসাপঠা পিঠা তৈরি করার জন্য কিছু সাধারণ উপকরণের প্রয়োজন। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • ময়দা – ১ কাপ
  • চালের গুঁড়া – ১/৪ কাপ
  • নারকেল কুচি – ১/২ কাপ
  • গুড় – ১/২ কাপ (আধা কাপ অথবা স্বাদ অনুযায়ী)
  • পানি – ১/২ কাপ (প্রয়োজন মতো)
  • তেল – ভাজার জন্য
  • পিঁয়াজ গুড়া (ঐচ্ছিক) – ১/২ চা চামচ

পাটিসাপঠা পিঠা তৈরির পদ্ধতি

১. পিঠার আটা তৈরি করা:

প্রথমে ময়দা এবং চালের গুঁড়া একটি বড় বাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এর মধ্যে পানি যোগ করে মাখাতে থাকুন। মাখানোর সময় যাতে আটা খুব বেশি শক্ত বা নরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আটা যেন মধুর নরম হয় এবং সহজেই পিঠা বানানো যায়, এমন অবস্থায় মাখাতে হবে। আটা মাখানোর পর সেটি কিছু সময় ঢেকে রেখে দিতে পারেন, যাতে এটি ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।

২. নারকেল ও গুড়ের মিশ্রণ তৈরি করা:

অন্য একটি পাত্রে নারকেল কুচি ও গুড় ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। যদি গুড় খুব কঠিন হয়, তাহলে সামান্য গরম পানি দিয়ে গুড়টি গলিয়ে নিন। এরপর নারকেল ও গুড়ের মিশ্রণটি ভালোভাবে একত্রিত করুন। এই মিশ্রণটি পাটিসাপঠার পুর হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

৩. পাটিসাপঠা গঠন করা:

এবার পাটিসাপঠা গঠনের পালা। পিঠার আটা থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করুন। এরপর প্রতিটি বলকে হাত দিয়ে পাতলা করে রোল করুন। রোলটি খুব পাতলা না করে মাঝারি আকারের রাখতে হবে। এবার, রোলের মধ্যে নারকেল ও গুড়ের মিশ্রণটি পুর হিসেবে দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন, পুর যেন বাইরে না বেরিয়ে আসে।

৪. তেলে ভাজার প্রস্তুতি:

তেল গরম করতে একটি প্যান বা কড়াইয়ে তেল ঢালুন। তেল গরম হয়ে গেলে, পাটিসাপঠাগুলি তেলে হালকা তাপে ভাজতে থাকুন। পাটিসাপঠা ভাজার সময় তেল খুব গরম না করে মাঝারি আঁচে ভাজা উচিত, যাতে পিঠাগুলি ভিতরে ভালোভাবে সেঁকে যায় এবং বাইরের অংশ ক্রিস্পি হয়ে ওঠে।

৫. পাটিসাপঠা ভাজা:

পাটিসাপঠাগুলি তেলে রাখার পর, সেগুলি একদম সোনালী এবং খাস্তা হয়ে ওঠা পর্যন্ত ভাজুন। একেকটি পাটিসাপঠা ধীরে ধীরে সোনালী রঙ ধারণ করবে এবং এর বাইরের অংশ ক্রিস্পি হয়ে যাবে। এই পিঠাগুলি ভাজার সময় তেল খুব বেশি গরম করবেন না, কারণ এতে পিঠার বাইরের অংশ ঝলসে যেতে পারে, কিন্তু ভিতরের অংশ কাঁচা থাকবে।

৬. পাটিসাপঠা পরিবেশন করা:

ভালোমতো ভাজার পর, পাটিসাপঠাগুলি কিচেন টিস্যুতে রেখে অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিন। এরপর, পাটিসাপঠা পিঠাগুলি গরম গরম পরিবেশন করুন। মিষ্টির স্বাদ এবং আকার খুবই লোভনীয় হয়, যা মিষ্টি প্রেমীদের মনের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।

পাটিসাপঠা পিঠার উপকারিতা

পাটিসাপঠা পিঠা শুধু সুস্বাদু নয়, কিছু উপকারিতা ও রয়েছে। নারকেল এবং গুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে। নারকেলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গুড়ের মধ্যে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। এই উপাদানগুলি শরীরের জন্য উপকারী এবং আমাদের শক্তি জোগাতে সহায়তা করে।

পাটিসাপঠা পিঠা বানানোর পরামর্শ

  1. পানি ব্যবহার: আটা মাখানোর সময় পানি ধীরে ধীরে যোগ করুন, যাতে আটা অত্যধিক নরম বা শক্ত না হয়ে যায়।
  2. পুরের পরিমাণ: পুর বেশি দিতে গেলে পাটিসাপঠা ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো পুর দিন।
  3. তেল গরম করা: তেল খুব বেশি গরম করলে পাটিসাপঠা দ্রুত পুড়ে যাবে এবং ভিতরে কাঁচা থাকবে। তাই মাঝারি তাপে ভাজুন।

পাটিসাপঠা পিঠা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

পাটিসাপঠা পিঠা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালীন উৎসবগুলোতে জনপ্রিয় একটি মিষ্টি। এর সহজ রেসিপি এবং মিষ্টি স্বাদ এটিকে সকলের প্রিয় করে তুলেছে। শীতের সময় পাটিসাপঠা পিঠার রেসিপি আরও বেশি তৈরি হয়, কারণ শীতকালীন মরসুমে গুড় এবং নারকেল সহজে পাওয়া যায়।

এছাড়া, পাটিসাপঠা পিঠা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হওয়ায় এটি খেতে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে, যাদের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তারা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে পারেন, কারণ এতে গুড় ব্যবহার করা হয়।

পাটিসাপঠা পিঠা একটি স্বাদে পরিপূর্ণ এবং সহজ রেসিপির মিষ্টি। এটি তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগে না এবং সবাইকে আনন্দিত করতে পারে। মিষ্টির প্রতি ভালোবাসা থাকলে, এই রেসিপিটি একবার চেষ্টা করতেই হবে। মনের আনন্দে পাটিসাপঠা পিঠা তৈরি করুন এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উপভোগ করুন।

এই রেসিপিটি সহজ, দ্রুত এবং সুস্বাদু হওয়ায় পাটিসাপঠা পিঠা একটি আদর্শ বাংলা মিষ্টি হিসেবে পরিচিত।

Md. Injamam Ul Islam Turag
Md. Injamam Ul Islam Turag

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *