দাঁতে গর্ত হলে কী করবেন? সম্পূর্ণ চিকিৎসা গাইড (Dental Caries Treatment in Bangla)
দাঁতে কালো দাগ বা গর্ত দেখা দেওয়া বাংলাদেশে অতি সাধারণ সমস্যা। এই দাঁতের ক্ষয় বা গর্তকে ডাক্তারি ভাষায় ডেন্টাল ক্যারিস (Dental Caries) বলা হয়। অনেকেই এই সমস্যাকে অবহেলা করেন, কিন্তু সামান্য গর্তই যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তা মারাত্মক জটিলতার কারণ হতে পারে। আজকে জেনে নিন দাঁতে গর্ত হলে আপনার করণীয় এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে।
কীভাবে বুঝবেন দাঁতে গর্ত (ডেন্টাল ক্যারিস) হয়েছে?
- খাবার জমে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে দাঁতে সূক্ষ্ম গর্ত তৈরি হয়েছে।
- ঠান্ডা, গরম বা মিষ্টি খাওয়ার সময় দাঁত শিরশির করা বা হালকা ব্যথা অনুভব করা
- দাঁতের উপর সাদা, বাদামী বা কালো দাগ দেখা দেওয়া
- দাঁতে স্পষ্ট গর্ত অনুভূত বা দৃশ্যমান হওয়া
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই বুঝতে হবে আপনার দাঁতে ক্যারিস হয়েছে এবং অবিলম্বে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডেন্টাল ক্যারিসের বা গর্তের গভীরতা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি:
স্তর ১: শুধু এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হলে (Enamel Caries)
- লক্ষণ: দাঁতের বাইরের শক্ত স্তরে (এনামেল) ছোটখাটো ক্ষয়।
- চিকিৎসা: দাঁতের ফিলিং (Tooth Filling)
- কী করবেন?
ডেন্টিস্ট ক্ষয়িষ্ণু অংশ পরিষ্কার করে কম্পোজিট রেজিন বা সিলভার অ্যামালগাম দিয়ে গর্ত পূরণ করবেন। মাত্র ১৫-৩০ মিনিটের এই চিকিৎসায় দাঁত পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
স্তর ২: ডেন্টিন পর্যন্ত ক্ষয় (Dentin Caries)
- লক্ষণ: এনামেল ভেদ করে নিচের নরম স্তরে (ডেন্টিন) ক্ষয় ছড়ালে তীব্র শিরশিরানি
- চিকিৎসা: অ্যাডভান্সড ফিলিং বা ইনলে/অনলে (Inlay/Onlay)
- কী করবেন?
ডেন্টিন ক্ষয়েও ফিলিং দিয়ে চিকিৎসা সম্ভব। তবে বড় গর্ত হলে ল্যাব-মেড কাস্টম ফিলিং (ইনলে/অনলে) ব্যবহার করা হয় যা দাঁতের প্রাকৃতিক গঠন ফিরিয়ে দেয়।
স্তর ৩: পাল্প/নার্ভ পর্যন্ত সংক্রমণ (Pulp Involvement)
- লক্ষণ: ক্ষয় দাঁতের সর্বোচ্চ স্তর (পাল্প) স্পর্শ করলে তীব্র, ধকধকে ব্যথা, রাতের বেলা ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
- চিকিৎসা: রুট ক্যানাল চিকিৎসা (Root Canal Treatment – RCT)
- কী করবেন?
এই অবস্থায় ফিলিং কার্যকর নয়। ডেন্টিস্ট সংক্রমিত নার্ভ ও রক্তনালি সরিয়ে দাঁতের ভিতর পরিষ্কার করে বায়োসেরামিক ফিলিং দিয়ে সিল করবেন। পরে ডেন্টাল ক্রাউন পরিয়ে দাঁতের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা হয়।
সময়মতো চিকিৎসা না করলে কী হয়?
- ছোট গর্ত অল্প দিনেই বড় হয়ে নার্ভে পৌঁছায়
- তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব (এবসেস) তৈরি হয়।
- দাঁত নষ্ট হয়ে বের করে ফেলতে (Extraction) হতে পারে।
- সংক্রমণ চোয়ালের হাড়ে ছড়িয়ে অস্টিওমাইলাইটিস হতে পারে।
- হারানো দাঁত প্রতিস্থাপনে ব্রিজ বা ইমপ্লান্ট লাগলে খরচ বহুগুণ বেড়ে যায়।
গবেষণা বলছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ৯০% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দাঁতে ক্যারিস আছে, যার বেশিরভাগই অপরিচ্ছন্নতা ও চিকিৎসা-বিমুখতার কারণে!
প্রতিরোধ ও সুরক্ষার উপায়:
- দিনে ২ বার ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ।
- ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার।
- মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার সীমিত করুন।
- বছরে কমপক্ষে ২ বার ডেন্টাল চেকআপ।
জরুরি পরামর্শ:
“দাঁতের গর্ত যত ছোট, চিকিৎসা তত সহজ ও সস্তা!”
প্রথম শিরশিরানি বা দাগ দেখামাত্রই ডেন্টিস্টের কাছে যান। একটি সাধারণ ফিলিং ৫০০-২০০০ টাকায় করা গেলেও, রুট ক্যানাল চিকিৎসায় খরচ পড়ে ৫,০০০-১৫,০০০ টাকা আর দাঁত তুলে ফেললে ইমপ্লান্টে ৩০,০০০-৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
কখন ডেন্টিস্ট দেখাবেন?
- দাঁতে কোনো দাগ বা গর্ত দেখলেই
- খাওয়ার পর ব্যথা বা শিরশির শুরু হলে
- দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বা ফোলাভাব দেখা দিলে
সর্বোপরি: দাঁতের গর্ত (ডেন্টাল ক্যারিস) কোনও সাধারণ সমস্যা নয়! সময়মতো ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসাই পারে আপনার দাঁতের স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকারিতা রক্ষা করতে। ফিলিংয়ের মতো সহজ সমাধান থাকতে দেরি করে রুট ক্যানাল বা দাঁত হারানোর ঝুঁকি নেওয়া কখনই যুক্তিযুক্ত নয়। আজই একজন রেজিস্টার্ড ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করে আপনার দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।
সুস্থ দাঁত সুস্থ জীবনের ভিত্তি – সচেতন হোন, সময়মতো চিকিৎসা নিন।